নঈম নিজাম :বিজয়ের মাস ডিসেম্বর শুরু হয়েছে। দেশে চলছে এখন শোডাউনের রাজনীতি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি করছে পাল্টাপাল্টি। কার জনসভায় বেশি লোকসমাগম হলো, সেই আলোচনা ও প্রতিযোগিতা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার হঠাৎ বিএনপির মাঝারি পর্যায়ের একজন নেতা এলেন অফিসে। ব্যক্তিগত সম্পর্কের জেরে তাঁর আগমন। চা খেলেন। মনে হলো তিনি টেনশনে আছেন। জানতে চাইলাম কী হয়েছে? জবাবে গভীর উৎকণ্ঠা নিয়ে ফিসফিস করে জানতে চাইলেন, কী হচ্ছে দেশে? অবাক চোখে তাকালাম। বললাম, আপনার কথা বুঝতে পারিনি। সবকিছু তো ঠিকই আছে। তিনি আবার বললেন, বিএনপির ভিতরে অনেক গুজব। আলাপ-আলোচনায় সরকার পরিবর্তনের কথা উঠে আসছে। সবাই বলছেন সরকার আর বেশিদিন থাকতে পারবে না। ১০ ডিসেম্বরের পর মনে হয় অনেক কিছু ঘটে যাবে। বিস্ময় নিয়ে তাকালাম। বুঝলাম তিনি রাত জেগে সামাজিক মাধ্যম দেখেন। তবে তিনি সেদিকে গেলেন না। ভদ্রলোক দলের দুজন সিনিয়র নেতার নাম কোট করে বললেন, এই নেতারা দেশ নিয়ে অভ্যন্তরীণ আলোচনায় অনেক কথা বলেছেন। তাদের ধারণা, সহসা কিছু ঘটবে। পুনরায় চায়ের অর্ডার দিলাম দুজনের জন্য। তারপর বললাম, আগামী বছর ডিসেম্বরে আসবেন। সে পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। তারপর এলে বলব দেশে কী হচ্ছে। আপাতত এক বছরের মাঝে কিছু দেখছি না। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ভোট হবে। সে ভোটের ফলাফল নিয়ে আলোচনার সময় এখনো আসেনি। এক বছর আগে কথা বলার কিছু নেই। গুজবে কান না দিয়ে ভোটের প্রস্তুতি নিন। আমার দাদি বলতেন, ভাদ্রের গল্প চৈত্রে করে কী লাভ?
গণতান্ত্রিক রীতিনীতিতে সরকার বদলের একমাত্র উপায় নির্বাচন। ভোটের এখনো অনেক দেরি। হতাশা থেকে দেশ-বিদেশে বসে অনেকে গুজব ছড়াচ্ছেন। এ গুজব বাংলাদেশ নিয়ে। আগাম ভোটের ঘোষণা নির্বাচন কমিশন এখনো দেয়নি। দেবেও না। বিএনপির উচিত আগাম গুজবে কান না দিয়ে ভোটের প্রস্তুতি নেওয়া। শর্টকার্ট পদ্ধতি এ যুগে এ সময়ে অচল। গোয়েবলসীয় প্রচারণায় মানুষ সাময়িক বিভ্রান্ত হয়, পরে সব বোঝে। দেশে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যে আকাশে কালো মেঘ নামিয়ে আনবে। প্রধানমন্ত্রী কঠিন মানসিক শক্তির অধিকারী। তিনি জটিল অনেক ঘটনা মোকাবিলা করায় অভ্যস্ত। খারাপ সময়ে একাই হয়ে ওঠেন এক শ। পরিস্থিতি সামলাতে জানেন কখন কী করতে হবে। বিশ্বের ক্ষমতাবানদের মধ্য তিনি সবচেয়ে প্রবীণ রাজনীতিবিদ। পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায়। ১৯৮১ সালে দলের দায়িত্ব নিয়েছেন। টানা দল চালাচ্ছেন। কোনো সমস্যা নেই। ১৯৮৬ সালে সংসদে বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন মন্ত্রীর মর্যাদায়। ১৯৯১ সালে দলের ডক্টর সাহেবদের নানামুখী ষড়যন্ত্রে পড়ে ক্ষমতায় আসতে পারেননি। আবার বিরোধী দলের নেতা হয়েছিলেন। সে সময় তাঁকে কাছ থেকে দেখেছি। ১৯৯১ সালের ভোটের সময় এবং এর পরের বছরগুলোয় তাঁর সঙ্গে একজন সংবাদকর্মী হিসেবে সারা দেশ সফরের অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। তিনি পারেন শূন্যকে হাজার করতে। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে পাঁচ বছর সফলতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০০১ সালের ভোটে আওয়ামী লীগ হেরে যায়। শেখ হাসিনা আবার বিরোধী দলের নেতা হন সংসদে। হামলা, মামলায় আওয়ামী লীগ চরম বিপর্যয়ে পড়ে। অত্যাচার-নির্যাতন চরম রূপ নেয়। সারা দেশে বিভীষিকা সামলাতে না পেরে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেনাবাহিনী নামিয়েছিলেন। অপারেশন ক্লিনহার্ট অভিযান করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়েছিল বএনপিকে। সেই পরিস্থিতি সামলিয়ে তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন। মোকাবিলা করেছেন ওয়ান ইলেভেন। কারাভোগ করেছেন। ভেঙে পড়েননি। শেখ হাসিনা জানেন, তাঁর ওপর কারা গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। কঠিন বাস্তবতা হলো, তিনি তাদের হাতে ক্ষমতা জীবনেও দেবেন না।
আমার কঠিন বাস্তবতা নিয়ে বলা কথায় বিএনপি নেতা খুশি হতে পারলেন না। তিনি বললেন, ব্যাংকগুলোর অবস্থা দেখছেন? অর্থনৈতিক অবস্থা ভয়াবহ। এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। দেখবেন একটা বড় ক্রাইসিস আসছে দেশে। জবাবে বললাম, যুদ্ধ ও করোনার অর্থনৈতিক সংকট আমাদের একার নয়। সারা বিশ^ আর্থিক সংকট মোকাবিলা করছে। বাংলাদেশ এর বাইরে যাবে কী করে? তবে শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, এ যুগে এ সময়ে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হবে না। ডলারের সংকটও কেটে যাবে ধীরে ধীরে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তহীনতায় শ্রমবাজার মন্দা যাচ্ছে। মালয়েশিয়া যখন শ্রমিক চেয়েছিল অভ্যন্তরীণ রশি টানাটানিতে আমরা পাঠাতে পারিনি। এখন মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নেপালের দখলে। হুন্ডি ও নানামুখী কারণে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কম। তাই বলে সব ঠেকে থাকবে মনে করার কারণ নেই। বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে উৎপাদন বেড়েছে। ছোটবেলায় দেখতাম এক কানি বা ৪ বিঘা জমিতে ধান হতো ১০ মণ। এখন ১০০ মণ ছাড়িয়ে গেছে। কৃষক আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছে। ধান, মাছ, তরকারি উৎপাদন করছে। শিক্ষিত বেকাররা কৃষিকাজে জড়িয়েছে। এখন শুধু দেশি নয়, বিদেশি ফলও তারা উৎপাদন করছে। বাংলাদেশ আসলে বদলে গেছে। আশার আলো তৈরি হয়েছে সবখানে। দেশের অর্থনীতি শুধু সরকারনির্ভর নয়। বেসরকারি খাতেরও অবদান বাড়ছে। অর্থনৈতিক মন্দা আমাদের থামিয়ে রাখতে পারবে না।
বিএনপি নেতার সঙ্গে কথা বলতে বলতে অফিস থেকে বের হলাম। তিনি জানতে চাইলেন কই যাচ্ছি? জবাবে বললাম, ক্যাপ্টেন (অব.) তাজুল ইসলামের বাসায়। আওয়ামী লীগের প্রবীণ এমপি ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে একজন হলেন তাজ ভাই। তিনি সবসময় প্রাণবন্ত তারুণ্যনির্ভর থাকেন। তাজ ভাইয়ের সঙ্গে সেই বিএনপি নেতারও সম্পর্ক ভালো। তিনি বললেন, আমিও যাব আপনার সঙ্গে। বললাম চলেন। ভদ্রলোককে নিয়ে তাজ ভাইয়ের বাসায় গেলাম। তাজ ভাইকে বললাম, এই নেতা উৎকণ্ঠায় আছেন। তাঁর মনে সন্দেহ হচ্ছে, দেশে কিছু একটা ঘটবে। তাজ ভাই হাসলেন। তারপর বললেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা ১০ ডিসেম্বরের পর চরম হতাশ হবে। তাদের অস্থিরতা থেকেই তারা আরও এক বছর ভোট পর্যন্ত ধৈর্য রাখতে পারবে না। অধৈর্য অবস্থান থেকে তারা নানামুখী কাজ করবে। গুজবে কান দেবে। বিএনপিকে ভোটের সময় সামলাতে আওয়ামী লীগকে কিছু করতে হবে না। তার আগেই তারা মাঠ থেকে সরে পড়বে। তাজ ভাইয়ের বাসায় চা খেয়ে বেরিয়ে এলাম।
আওয়ামী লীগ ব্যস্ত এখন দলের সম্মেলন নিয়ে। বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় সম্মেলনের সমাবেশ হচ্ছে। সরকার ঠাণ্ডা মাথায় আছে অর্থনীতি সামলানো নিয়ে। অনেক দিন কর্মসূচি পালন না করে অস্থিরতায় আছে বিএনপি। সারা দেশে তাদের জনসমাবেশে ভালো লোকজন হচ্ছে। এ জনস্রোত দেখে তারা পড়েছে অস্থিরতায়। তারা মনে করছে দেশে মনে হয় কিছু একটা ঘটতে চলেছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে একবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল ডেডলাইন দিয়েছিলেন। মানুষ সেই ডেডলাইন নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত ছিল। বিএনপিকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক ধারায় ফিরতে হলে ধৈর্য ধরতে হবে। বিএনপির প্রধান দুই নেতা এখন দুই দেশে। একজন এখনো আছেন আইনি জটিলতায়। আরেকজন দেশে আসতে পারছেন না। বিপরীতে আওয়ামী লীগ চাঙা একজন শেখ হাসিনাকে ঘিরে। সব ধরনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি সামাল দিচ্ছেন সবকিছু। তাঁর অভিজ্ঞতার কাছে মার খাচ্ছে বিএনপি। দাঁড়াতেই পারছে না তারা। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেও লাভ হয় না। একজন শেখ হাসিনা জানেন, কীভাবে ভিতর-বাইরের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হয়।
ক্ষমতাকালে আওয়ামী লীগের সর্বনাশ কখনো অন্য দল করতে পারে না। আওয়ামী লীগের ক্ষতিটা দলের ভিতর থেকেই হয়। দেশটা স্বাধীন করে ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতা নেওয়ার এক বছরের মধ্যে দলের মুক্তিযুদ্ধে উজ্জীবিত তরুণ নেতা-কর্মীরা তৈরি করলেন জাসদ। পুরোটা ছিল আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। আওয়ামী লীগকে দুর্বল করতে ছাত্রলীগের সাহসী কর্মীদের আলাদা করে দেওয়া হলো। তারা গিয়ে অবস্থান নিলেন বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের প্রতিটি স্থানে তখন সংকটের শেষ নেই। খাদ্য সংকট, আর্থিক অবস্থার ভয়াবহতা নিয়ে বঙ্গবন্ধু ছিলেন কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায়। সে সময় স্বাধীনতাবিরোধী চক্র, সর্বহারা পার্টি, চীনা কট্টর বামদের অতি বাড়াবাড়ির সঙ্গে যুক্ত হলো জাসদ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে এমপিদের খুন করা হলো। থানা, পুলিশ ফাঁড়ি যখন তখন লুট হতো। সদ্যস্বাধীন দেশের ঘরে-বাইরে শুধুই ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের ডালপালা বাড়তে থাকে। দলের ভিতরে তৈরি হয় খন্দকার মোশতাক চক্র। সব চক্রের ষড়যন্ত্রে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে জীবন দিতে হলো। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ মিছিল, সমাবেশ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। সেসব করুণ ইতিহাস সামনে রেখেই শেখ হাসিনা দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ১৯৮১ সালে। তিনি দেখেছেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনের ক্ষতি দলের ভিতর থেকেই হয়েছিল। মোশতাকের সঙ্গে থাকার পরও মনোনয়ন পেয়েছিলেন জেনারেল (অব.) খলিলুর রহমানসহ অনেকে। ১৫ আগস্টের দিন খলিল ছিলেন বিডিআরপ্রধান। তখন রক্ষীবাহিনীর নিজস্ব কোনো অস্ত্রাগার ছিল না। সব অস্ত্র রাখতে হতো পিলখানায়। ১৫ আগস্ট সকালে অস্ত্র আনতে গিয়ে বিপত্তিতে পড়ে রক্ষীবাহিনী। জেনারেল খলিল কোনো অস্ত্র দেননি রক্ষীবাহিনীকে। তিনি ওসমানীর সঙ্গে চলে যান মোশতাকের কাছে। খুনিদের আগলে রাখেন তারা। আওয়ামী লীগ ওসমানীকে প্রেসিডেন্ট ভোটে সমর্থন দিয়েছিল জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে। এত বছর পর এখন প্রশ্ন উঠছে- সেই জেনারেল খলিলকে কারা আওয়ামী লীগের নেতা বানিয়েছিল? ১৯৯১ সালে দিয়েছিল দলীয় মনোনয়ন। ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। ইতিহাসের পালাবদল মনে রেখেই সামনে যেতে হবে। ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালের ভোটে কামাল হোসেনদের নানামুখী তৎপরতা ছিল। সেই ভোটে ড. কামাল হোসেন, জেনারেল (অব.) খলিল কেউই বিজয়ী হননি। দলে এই গোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ বিরোধিতা মোকাবিলা করেছিলেন শেখ হাসিনা। আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে কীভাবে বাকশাল হলো এত বছর পর বলতে চাই না। কারা আবদুর রাজ্জাককে উসকিয়ে দিয়েছিলেন তা-ও আলোচনায় আনতে চাই না। তবে অনেক বাকশাল নেতার বক্তৃতা ছিল কট্টরভাবে শেখ হাসিনাবিরোধী। ১৯৯১ সালে বাকশাল আলাদাভাবে ভোটে গিয়েছিল। বিএনপির ওবায়দুর রহমানের জাহাজ মার্কা ক্ষতি করেছিল আওয়ামী লীগের। দলের দায়িত্ব নিয়ে ১৪ বছরে সব মোকাবিলা করেই শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসেন। ষড়যন্ত্র তাঁর পিছু ছাড়েনি। তিনি সব সামলিয়েছেন। এখনো সামলাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঘরে-বাইরে এখনো চক্রান্তকারীরা তৎপর। কাছের মানুষই সবসময় সর্বনাশ করে। নেতৃত্বের অতি উদারতা দলের বারোটা বাজায়। ঘরের সর্বনাশ করতে পরকে টেনে আনেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরাই। দলের এমপি হয়ে বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে প্রকাশ্যে অনেকেই বারবার অবস্থান নেন। তাদের আশ্রয়-প্রশয় দেন। এ চক্র বারো মাস আওয়ামী লীগ করে। সব সুযোগ-সুবিধা কড়ায় গণ্ডায় নেয়। ভোট এলে শেখ হাসিনার নির্দেশ মানে না। খারাপ সময়ে গোপনে নেত্রীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এমন আওয়ামী লীগারদের রাখার কী দরকার বুঝি না! আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি হবেন, দলীয় পদ নেবেন কাজ করবেন বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে- তা কী করে হয়? কিছু সুবিধাভোগী মানুষ গাছেরটা খায়, তলারটাও কুড়ায়। এভাবে চলতে পারে না। আজকাল আওয়ামী লীগের সর্বনাশটা দলের ভিতর থেকেই বেশি হচ্ছে। বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা দলের বিপক্ষে যান না। তারা দুঃখ আর অভিমান নিয়ে বেঁচে থাকেন। অভিমানী কথা বলেন। দলের ও নেত্রীর ক্ষতি করেন না। দলের ক্ষতি তারাই করেন যারা গত ১৪ বছরে বেশি পেয়েছেন। এই লোভী-ক্ষতিকর চক্রকে চিহ্নিত করতে হবে। এ চক্রের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে সাইনবোর্ড নিয়ে চলা ক্ষতিকরদের বের করে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের পক্ষে অবস্থান গ্রহণকারী অনেক প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যকে চিহ্নিত করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। তবে সেই ব্যবস্থা ততটা কঠোর ছিল না। উদারতার খেসারত বঙ্গবন্ধুকে দিতে হয়েছিল। ইতিহাসের সেই বাস্তবতা মনে রেখেই আওয়ামী লীগকে সামনে যেতে হবে। গত ১৪ বছরে শেখ হাসিনা দেশকে নতুন মাত্রা দিয়েছেন। এখন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় লড়ছেন। তিনি একাই ম্যারাডোনার মতো গোল দিয়ে জয় আনতে জানেন। তিনি পারছেন। তিনি পারবেন। ভরসা রাখুন। এ সংকট কেটে যাবে। সবকিছু সামাল দেবেন তিনি। তবে সতর্ক থাকতে হবে ঘরে-বাইরের চক্রান্তকারীদের সম্পর্কে। সবকিছু উদারতা নিয়ে দেখলে হবে না। ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ, মেসি সবসময় পেনাল্টি থেকে গোল দিতে পারেন না। মিসও করেন। পোল্যান্ডের সঙ্গে মেসি পেনাল্টি মিস করেছেন।
লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন